একদল সাহসী করোনা যোদ্ধার গল্প



একদল করোনাযোদ্ধা করোনা মৃতদেহ সৎকার সেচ্ছাসেবক সংঘ। যারা নীরবে-নিভৃতে কাজ করে চলেছেন। মৃত্যুর ভয়কে উপেক্ষা করে ছুটছেন একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। যখন স্বয়ং আত্মীয় স্বজনরা প্রাণভয়ে মৃতদেহের পাশে আসতে অনীহা প্রকাশ করেছেন, সেখানে করোনা মৃতদেহ সৎকার সেচ্ছাসেবক সংঘ করে চলেছে সেইসব মৃতদেহের সৎকার।

নিজেদের সাহস কাজে লাগিয়ে প্রতিদিনই করোনার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন সংগঠনটির সকল সদস্য, সেখানে আহবায়ক এর দায়িত্বে আছেন চট্রগ্রামে সবার পরিচিত মুখ জুয়েল আইচ অর্ক। 




করোনাভাইরাস মোকাবেলায় চট্টগ্রামে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সামনের সারিতে থেকে জরুরি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। করোনার বিরুদ্ধে তাদের সঙ্গে সমানতালে কাজ করছেন এইসব সেচ্ছাসেবকরা।

নিজেদের পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের কথা না ভেবেই প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত করোনায় মারা যাওয়া মৃতদেহ গুলো ধর্মীয় মতে সৎকার করেই চলছে।

প্রাণঘাতী সংক্রামক ব্যাধি করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত অনেকেই। অনেক জায়গায় করোনা মৃতদেহ সৎকারে পেতে হয়েছে সমাজের নানা বাধাও এগিয়ে আসেনি স্বজনরাও ঠিক সেই সময় গত বছর ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সংঘের মূখ্য সচিব ডাক্তার যীশুময় দেব এর অনুপ্রেরনায় এক দল যুবক এগিযে আসে গঠন করে এই করোনা মৃতদেহ সৎকার সেচ্ছাসেবক সংঘ। তাদের এই সাহসিকতামূলক কর্মকাণ্ড এরই মধ্যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরও স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে তারা কাজ করছে খুব কাছ থেকে। কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা।  STV নিউজকে জানিয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতার গল্প।

আহবায়ক জুয়েল আইচ অর্ক বলেন, চট্টগ্রামে বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে গিয়ে সৎকার করছি আমরা। প্রথম প্রথম যখন সৎকার করতাম তখন একটু ভয় পেতাম, যেহেতু করোনা অতি সংক্রমিত ভাইরাস, এজন্য এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে প্রথমে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। এরপর থেকে আর তেমন ভয় করিনা। এখন প্রতিদিন ৩-৪ টাও সৎকার করতে হয় আমাদের। 


তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা প্রায় ৮০ টির অধিক সৎকার করেছি। কিন্তু এখনও আমাদের সকল সেচ্ছাসেবক সুস্থ আছেন। তাছাড়া পরিবার থেকে কখনও অসহযোগিতা পাইনি। বরং তাদের অনুপ্রেরণা আমাদের আরও বেশি সাহস জুগিয়েছে।তবে সৎকার করতে গিয়ে অনেক জায়গায় বাধার মুখে পরেছি কিন্তু এইসব বাধা উপেক্ষা করে সৎকার সম্পন্ন করেই বাসায় ফিরেছি।


সরকারের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, করোনা মৃতদেহ সৎকারে আমরা এখনো পর্যন্ত কোন সরকারের সুযোগ সুবিধা পাইনি তবে সমাজের নানা শ্রেনীর মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ বিভিন্ন উপকরণ পাচ্ছি।

করোনার এই সম্মুখযোদ্ধা বলেন, প্রথমের দিকে করোনা মৃতদেহ সৎকার করে এসে পরিবারের সদস্যদের কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকতাম। এমন কি আমার ৫ বছরের মেয়েটা দৌড়ে কাছে আসার চেষ্টা করলেও তাকে আসতে বাধা দিতাম। দূর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতাম। সব সময় সচেতন থাকার চেষ্টা করি।

তিনি আর বলেন, করোনায় বা উপসর্গে কেউ রাতে মারা গেলে আমাদের সেচ্ছাসেবকদের রাতেও বের হতে হয়। এটা আসলে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা। করোনাভাইরাসের মতো এমন ভাইরাস আগে কখনও আসেনি। সেহেতু এটা নিয়ে কাজ করা একদমই নতুন অভিজ্ঞতা।


একমাত্র সচেতনতাই পারে করোনাভাইরাসের এই ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত করতে। মুখে সবসময় মাস্ক ও সাবান দিয়ে হাতধোয়া এগুলো সব সময় সবার করা উচিত বলে মনে করেন করোনা যুদ্ধের এই সম্মুখযোদ্ধা।









Post a Comment

0 Comments