
বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার থেকে ॥ ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে বণার্ঢ্য আয়োজনে উদ্যাপিত হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজা শুরুর বাকী এখনো প্রায় ৯ দিন। কিন্তু আগামী ২৯ সেপ্টেমম্বর শুভ মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হবে শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন তথা দেবীপক্ষের। পুরাণমতে, এদিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা মহালয়ার দিন পা রাখবেন মর্ত্যলোকে। ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রস্তুতি। মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরি আর ডেকোরেশনের কাজ। এদিকে দুর্গোৎসবকে সামনে পুরো জেলায় উৎসবমূখর পরিবেশে পূজা উদ্যাপনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আর পূজাকে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর এরই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাথে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম। ইতোমধ্যে দুর্গোৎসব উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে জেলায় মোট ১৫৫ মেট্রিক টন জিআর চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার জেলায় মোট ৩১০টি মন্ডপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ১৪২টি প্রতিমা ও ১৬৮টি ঘট পূজার মন্ডপ রয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজার পৌর এলাকায় ১১টি প্রতিমা, ৮টি ঘট, সদর উপজেলায় ৩৫টি প্রতিমা, ৩৩টি ঘট, রামু উপজেলায় ১৯টি প্রতিমা, ১২টি ঘট, চকরিয়া উপজেলায় (পৌর এলাকাসহ) ৪৬টি প্রতিমা, ৪০টি ঘট, পেকুয়া উপজেলায় ৬টি প্রতিমা, ৮টি ঘট, কুতুবদিয়া উপজেলায় ১৩টি প্রতিমা, ২৯টি ঘট, মহেশাখালী উপজেলায় (পৌর এলাকাসহ) ১টি প্রতিমা, ৩০টি ঘট, উখিয়া উপজেলায় ৬টি প্রতিমা, ৮টি ঘট এবং টেকনাফ উপজেলায় (পৌর এলাকাসহ) ৫টি প্রতিমা পূজার মন্ডপ স্থাপিত হয়েছে। এবছর দেবী দুর্গা আগমন করবেন ঘোটকে আর গমনও করবেন ঘোটকে। দুর্গাপূজার এখনো ৯দিন বাকী থাকলেও এখন থেকে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের মাছে কড়া নাড়ছে দূর্গোৎসবের আনন্দের বারতার। শুধু সনাতনী সম্প্রদায় নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই বাংলাদেশে সকল সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে এ দুর্গোৎসব একটি সামাজিক উৎসবও বটে। দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে শহরের প্রধান সড়কস্থ স্বরসতী বাড়িতে চলছে জেলার প্রবীণ প্রতিমা কারিগর নেপাল ভট্টাচার্য্যর তত্ত্বাবধানে প্রতিমা তৈরির কাজ। তিনি জানান-প্রতি বছরের ন্যায় এবছর তার তত্ত্বাবধানে পঞ্চাশের অধিক প্রতিমা তৈরি হয়েছে। এই প্রতিমাগুলো জেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপের অর্ডারকৃত। শহরের হাসপাতাল সড়কস্থ বঙ্গপাহাড় সার্বজনীন দূর্গোৎসব উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি সুজন শর্মা বলেন-অন্যান্য বছরের চেয়ে আরো ঝাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনের প্রস্তুতি চলছে। আর এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সদর উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি দীপক দাশ বলেন-সদরের প্রত্যেক পূজা মন্ডপে অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উৎসবমূখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালন করা হবে। আর এজন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। জেলা পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এডভোকেট রনজিত দাশ ও সাধারন সম্পাদক বাবুল শর্মা জানান, এবছর দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। এখন থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা ও পুজার মঞ্চ তৈরির কাজ। তারা পুজাকে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে উদ্যাপনের জন্য প্রশাসনসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বিপিএম জানান, পুজাকে কেন্দ্র করে বরাবরের মতোই পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সে লক্ষ্যই ইতোমধ্যে পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য, আগামী ৪ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া এ দুর্গোৎসব সপ্তমী, অষ্টমী ও মহা নবমী শেষে ৮ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিনে সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে।
0 Comments