এদিকে গত বুধবার বিকালে নিহতের লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তার বাড়িতে আনলে তাকে এক নজরে দেখতে হাজার হাজার এলাকাবাসীর ঢল পড়ে। উপস্থিত হাজার জনতা পেস্টুন, ব্যানার দিয়ে সুদ হোরদের ফাঁসির দাবীতে মানববন্ধন ও প্রশসাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার অনুরোধ করে। এছাড়া পুত্রের লাশ দেখে মা, স্ত্রী কান্নায় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। মা লিলি আচার্য্য কান্নায় জড়িত কন্ঠে বলে আমার পরিবারের একমাত্র উর্পাজনকারী আমার ছেলে সুমন আজ নাই। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে, সুদ হোরেরা আমাদের পরিবারকে ধবংস করে দিয়েছে। আমি এই খুনিদের বিচার চাই। অপরদিকে স্বামীর লাশ দেখে ৭ মাসের অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রী তৃষ্ণা আচার্য্য অজ্ঞান হয়ে পড়ে। একমাত্র ৬ বছরের কন্যা পিতার লাশের দিকে অবাগ দৃষ্টিতে থাকিয়ে থাকে।
জানা যায় নিহত সুমন আচার্য্য’র পৈত্রিক বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নে হলেও দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পটিয়া-আনোয়ারা উপজেলা সীমান্তবতর্বী কালীগঞ্জ সেতুর দক্ষিণ পাশে হরি মন্দিরে স্ব-পরিবারে থেকে মৃৎশিল্পীর কাজ করত সুমন। গত দেড় বছর পূর্বে নুর জাহান নামে ঐ মহিলা কাছ থেকে সুমন আচার্য্য ৬০ হাজার টাকা সুদের বিনিময়ে গ্রহণ করেন। দীর্ঘ দেড় বছর সুদ হিসেবে প্রতিমাসে ৯ হাজার টাকা করে পরিশোধ করে । কিন্তু সুমন আগস্ট মাসে মূল টাকা হইতে ৩০ হাজার টাকার পরিশোধ করে। এছাড়া দুইমাস ধরে সুদের টাকা দিতে না পারায় গত শুক্রবার সকালে ৮টার দিকে হরি মন্দিরে নুরজাহান, লিমা আকতার সায়রা, মোঃ সুলতান এসে সুমন আচার্য্য ও সুমন আচার্য্য’র মা লিলি আচার্য্য ও তার অন্তস্বত্ত্বা স্ত্রী তৃষ্ণা আচার্য্যকে সুদের টাকা দিতে না পারায় মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করলে এই অপমানের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকাল ১০টার সময় বসত ঘরে পিছন গিয়ে সুমন আচার্য্য বিষ পান করে। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু ঘটে। বুধবার রাতে তার সৎকার সম্পন্ন হয়।
আরো জানা যায় পটিয়া উপজেলার বাচা মিয়া, বেলাল মেম্বার ও আনোয়ারা উপজেলার নুর জাহান, লিমা আকতার সায়রা, মোঃ সুলতানসহ একটি সিন্ডিকেট দল জরুরী ব্যাংক নামে গরীব মানুষের কাছে সাপ্তাহিকও মাসিক সুদের হার হিসেবে টাকা লাগিয়তি করে। এই সিন্ডিকেট দলের কারণে দুই উপজেলার প্রায় শতাধিক পরিবারের জায়গা সম্পত্তি ও ঘর বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এলাকায় জানা যায়, এই সিন্ডিকেট দলের মূল হোতা হচ্ছে বাচা মিয়া ও বেলাল মেম্বার। সুদের টাকা দিয়ে বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি বানিয়েছে এই দুইজন। তাদের অত্যাচারে রক্ষা পায়নি পঙ্গু নারায়ন শীলও। নারায়ন এই প্রতিবেদককে জানান, দুইবছর আগে বাচা মিয়া কাছ থেকে সাপ্তাহিক ১ হাজার টাকা সুদে ১০ টাকা দার নিই। সুদের টাকা এক বছর চালানোর পর অপরাগতা হইলে তার সহযোগী নুর জাহানের কাছ হইতে গত এক বছর আগে সাপ্তাহিক ১২শ টাকা সুদে ১০ হাজার টাকা দার নিয়ে ৬ মাসের সুদ পরিশোধ করি। পরবর্তীতে দুইজনের সুদের টাকা দিতে না পারায় তারা আমার নয়াহাট সেলুনের দোকানে এসে মারধর ও আমার পরিবারের কাছে এসে বলে যে, সুদের টাকা দিতে না পারলে আমাকে মেরে ফেলবে। সে ভয়ে আমি গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাই। আমার মত দুই উপজেলায় প্রায় একশত পরিবার ভয়ে বাড়ি ঘর পেলে পালিয়ে আছে।
0 Comments