
যদি জল নিয়ে বসতাম তা’হলে তাদের ধর্ম বলতাম। যদি প্রাণি-তত্ত্ব নিয়ে বসতাম, তাহ’হলে প্রাণীর ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতাম। মানুষের প্রসঙ্গ হচ্ছে, তাই মানুষের ধর্ম কি তাই, বলার চেষ্টা করতে হবে।
যেসব গুণ তাকলে মানুষকে মানুষ বলা হয় এবং না থাকলে মানুষ বলা চলে না, যা নিয়ে নিলে সে আর মানুষ থাকে না - সেটাই মানুষের ধর্ম। যে গুণ বা গুণের সমষ্টি থাকলে মানুষকে মানুষ বলা চলে, বলা উচিত - তা কি?
খুব সাংঘাতিক একটা কিছু নয় - সেটার নাম মনুষ্যত্ব। যেমন জলের জলত্ব থাকবে, অগ্নির অগ্নিত্ব থাকবে, তেমনি মানুষেরও থাকা দরকার মনুষ্যত্ব। মানুষ আর পশু প্রায় একই। বিশেষ করে Medical Science - এর দৃষ্টিতে পশু আর মানুষে কোন ভেদ নেই। দেখছেন না, নতুন কোন ঔষধ আবিস্কৃতি হলে প্রথমে তা পশুর দেহে পরীক্ষা করা হয়। পশুর ব্যাধি যদি সারায় তবে ঘোষণা করা হয়, মানুষের দেহেও লাগবে। হয়ত ডোজের একটু পার্থক্য হ’তে পারে। তা’হলে, পশুতে আর মানুষে তফাৎ কোথায়? আমাদের শাস্ত্রীয় ভাষায়-
ধর্মেণ হীনা: পশুভি: সমানা:
মানুষ মাত্রেরই ধর্ম মনুষ্যত্ব। এটাই তার বিশেষত্ব। যদি না থাকে তবে সে পশুর সমান। একথা শাস্ত্র বলছে। আমরা যদি কোন মানুষকে পশু বলি, তা’হলে সে তৎক্ষণাৎ মারতে আসবে, না হয় নালিশ করবে মান-হানির। সুতরাং মানুষকে পশু বলতে আমাদের ভয় হতে পারে, কিন্তু শাস্ত্রের ত আর ভয় নেই। তাই সে নির্ভয়ে ঘোষণা করছে - মনুষ্যত্ব নামে যে একটা গুণ, যদি দেখ যে এটা নেই, তা’হলে তাকে মানুষ বলতে পারা যায় না।
‘‘ আহার -নিদ্রা-ভয় মৈথুনঞ্চ সামান্যমেতং পশুভির্ণরাণাম্।
ধর্মো হি তেষামধিকো বিশেষো ধর্মেণ হীনা: পশুভি: সমানা।।’’
মনুষ্যত্ববিহীন মানুষ আর পশুতে কোন পার্থক্য নেই। শুধু খাই দাই, ঘুমাই আর বংশবৃদ্ধি করি - এ ত পশুতেও করে। তা’হলে ত মানবও এক প্রকার পশু। ইংরাজীতে কথাটি দিয়ে মানুষে আর পশুতে পার্থক্য বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের বুদ্ধি আছে, কিন্তু পশুরও বুদ্ধি কম নেই।
মানুষের ধর্মে আর পশুপাখীদের ধর্মে পার্থক্য এই যে, পশু পাখী তাদের ধর্ম নিয়ে জন্মায়, আর মানুষ তার ধর্ম নিয়ে জন্মায় না। মনুষ্যত্বটা মানুষকে অর্জন করে নিতে হয়।
আর একটু বৈশিষ্ট্য আছে। evolution theory মতে এককোষী প্রাণী থেকে মানুষ পর্যন্ত আসতে পথে তার অনেক জিনিষ হারিয়ে গেছে। পাখিদের মত সে উড়তে পারে না, মাঝের মত জলের নীচে থাকতে পারে না, বাঘের মত দাঁত, নখ তার নেই। এত জিনিস হারিয়েও সে অনেক লাভবান হয়েছে। সে এখন কাঁচা খায় না, রান্না করে খায়; অন্ধকারে থাকে না, আলো জ্বেলে নেয়। অর্থাৎ মনুষ্যত্ব লাভ করার যাবতীয় উপকরণ বা উপাদান তাকে দেওয়া হয়েছে - এখন তাকে মনুষ্যত্বটা অর্জন করে নিতে হবে। দাতা যিনি তিনি ভুল করেন নি। অতএব, মানুষকে জানতে হবে - মনুষ্যত্বটা কি এবং কি করে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয় - এটাই মানবধর্ম আলোচনার সার কথা। এরপর মনুষ্যত্বটা কি তাই বলব।
0 Comments