ধর্মান্তরিত হয়ে করেছিল বিয়ে-করোনায় মৃত্যুর পর লাশ রেখে পালালো স্বামী



গার্মেন্টসকর্মী আসমা ভালোবাসতেন মোজাম্মেলকে। সেই ভালোবাসার টানে আসমা ধর্মান্তরিত হয়ে হিন্দু থেকে হয়েছিলেন মুসলমান। কিন্তু করোনার জীবাণু যখন আসমার শরীরে জেঁকে বসে এবং এর একপর্যায়ে হাসপাতালের শয্যাতেই মারা যান নিঃসঙ্গ অবস্থায়— খবর শুনে স্বামী ততোক্ষণে চলে গেছেন আত্মগোপনে। মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, বাসায়ও তালা মেরে উধাও হয়ে গেলেন। কেউ আসেনি আসমার লাশ দেখতে। লাশটি পড়ে ছিল হাসপাতালের মর্গে। শেষ পর্যন্ত ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবেই তার লাশটি দাফন করলো একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা— আকবরশাহের কবরস্থানে।


করোনায় আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৮ জুলাই) রাতে মারা যান ৩৮ বছর বয়সী আসমা আক্তার। আগের দিন (৬ জুলাই) স্বামীর সঙ্গে চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে করোনা পজিটিভ হন তিনি। এরপর আসমাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েই তড়িঘড়ি চলে যান স্বামী মোজাম্মেল হক। এরপর মোবাইলে করোনা ওয়ার্ডের নার্সদের সঙ্গে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যাপারে যোগাযোগ রাখলেও রাতে স্ত্রীর মৃত্যুর খবর জানাতে গেলে তাকে আর পাওয়া যায়নি। হাসপাতাল থেকে মোজাম্মেলের ফোনে যোগাযোগ করতে গিয়ে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হাসপাতালে দেওয়া আসমার ঠিকানায় ডবলমুরিং থানা পুলিশ গেলেও তার বাসা তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে।


শেষমেষ কোনো উপায় না দেখে চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় নগরীর আকবরশাহ কবরস্থানে দাফন হল আসমার। শেষ যাত্রায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের লোকজন ছাড়া পরিবারের একজন সদস্যওকেও কাছে পাননি আসমা।


যে বাসায় আসমা ও তার স্বামী ভাড়া থাকতেন, ওই বাসার মালিকও উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি আসমার পরিবার সম্পর্কে। শুধু জানিয়েছেন, ভালবাসার টানে ধর্মান্তরিত হয়ে মোজাম্মেলকে বিয়ে করেছিলেন গার্মেন্টসকর্মী আসমা।


চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৭ জুলাই) দিবাগত রাত ১টায় এই হতভাগ্য নারীর মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার (৬ জুলাই) দিনে আসমা করোনা ইউনিটে ভর্তি হন স্বামীর সঙ্গে এসে। মৃত্যুর আগপর্যন্ত আসমার স্বামী মোজাম্মেল ওয়ার্ডে যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি ওয়ার্ডের বাইরে অবস্থান করছিলেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর মোজাম্মেলকে কয়েকবার ফোন করা হয়। তিনি আসবেন বলে পরে আর আসেননি। একপর্যায়ে তার মোবাইলটি ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সেই ফোন আর খোলেননি এখন পর্যন্ত।


চমেক হাসপাতালে ভর্তির সময় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আসমা-মোজাম্মেলের বাসা চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার মৌলভীপাড়ায়। ওই ঠিকানায় থানার উপ-পরিদর্শক মহিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ডবলমুরিং থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে বাসার দরজায় তালা দেখতে পায়।




বাসার মালিক সোলাইমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসমা আর মোজাম্মেল আগেও তার বাসায় থাকতো। এক বছর আগে বাসার ভাড়া না দিয়ে চলে যায় তারা। এক মাস আগে শুধু আসমা এসে আবার বাসা ভাড়া নেয়। শুরুতে সে একা থাকতো। পরে ১৪-১৫ দিন আগে মোজাম্মেলও আসে।’

Post a Comment

0 Comments