ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ‘পাড়া ছেড়ে না গেলে মেরে ফেলা হবে’ হুমকি

আনসার সদস্য নিয়ে গিয়ে ত্রিপুরাদের ঘর নির্মাণে বাধা দিয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ।



কাঞ্চন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা এই পাড়ায় যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছি। পাড়ার সঙ্গে লাগোয়া একটি খালি জায়গায় সম্প্রতি নতুন করে কয়েক জন ত্রিপুরা ঘর তৈরির কাজ শুরু করে। শুক্রবার সকালে আবুল খায়ের গ্রুপের লোকজন জায়গাটি তাদের দাবি করে ঘর তৈরিতে বাধা দেয়।’


মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকা একটি সমতল ভূমিতে নৃগোষ্ঠী ত্রিপুরাদের ঘর তৈরিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে।


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটেছে।



আবুল খায়ের গ্রুপ বলছে, যে জায়গায় ত্রিপুরারা ঘর তৈরি করতে চাইছেন, সেটি তাদের কেনা জমি। আবুল খায়েরের নামে জমিটির বিএস নামজারি হয়েছে। জায়গাটি প্রায় এক একর।


ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা কাঞ্চন কুমার ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা এই পাড়ায় যুগ যুগ ধরে বাস করে আসছি। পাড়ার সঙ্গে লাগোয়া একটি খালি জায়গায় সম্প্রতি নতুন করে কয়েকজন ত্রিপুরা ঘর তৈরির কাজ শুরু করে। শুক্রবার সকালে আবুল খায়ের গ্রুপের লোকজন জায়গাটি তাদের দাবি করে ঘর তৈরিতে বাধা দেয়।


তিনি বলেন, ‘তারা আনসার সদস্য নিয়ে এসে আমাদের কাজ করতে দেয়নি। অথচ আমরা জানি জায়গাটি সরকারি। কিন্তু এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমরা সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি।’


সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার পর ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা আমার কাছে এসেছিল। তাদেরকে আমি উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিতে বলেছি।’


সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পাড়াটিতে অন্তত ৭৫টি পরিবার বসবাস করে। ওই পাড়ার বাসিন্দা সংখ্যা প্রায় ৪০০ জন।


সোনাইছড়ির বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তারা নিরীহ, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আবুল খায়ের গ্রুপ এর আগে ওই এলাকায় পাহাড় কেটে স্টিল মিল নির্মাণ করেছে। গ্রুপটি আগে জায়গা দখল করে পরে মালিকদের টাকা দেয়।’


তবে আবুল খায়ের গ্রুপের দাবি, জায়গাটি তাদের কেনা।



আবুল খায়ের গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার ইমরুল কাদের ভূঁইয়া  বলেন, ‘ত্রিপুরা পাড়া থেকে ওই জমির দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। হঠাৎ করে ঈদের দিন পাড়ার কয়েক জন বাসিন্দা মিলে আমাদের জায়গায় ঘর তৈরির চেষ্টা করে। পরে আনসার সদস্যদের নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ বন্ধ করে দিই।’


তিনি বলেন, ‘সমস্ত ডুকমেন্টস আমাদের আছে, ইতোমধ্যে সব কাগজপত্র উপজেলা প্রশাসনকে দিয়েছি। আমাদের দাবি, জায়গাটি আবুল খায়ের গ্রুপের হলে সেখানে ত্রিপুরারা ঘর করতে পারবে না। আর যদি সেটি সরকারি হয় তাহলে আমাদের কোনো দাবি-দাওয়া থাকবে না।’


সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় বলেন, ‘দুই পক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বৈঠক হবে।’


ইউএনও বলেন, ‘জায়গার মালিক যদি আবুল খায়ের গ্রুপ হয়, তাহলে ত্রিপুরারা সেখানে ঘর করবে না। আর ওই জায়গার মালিক সরকার হলে সেখানে ত্রিপুরারা ঘর করবে।’


বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সীতাকুণ্ড ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, সীতাকুন্ডের ছোট কুমিরা ত্রিপুরা পাড়ায় ১২২ পরিবার, মহাদেবপুর ত্রিপুরা পাড়ায় ৪৫ পরিবার, ছোট দারোগাহাট ত্রিপুরা পাড়ায় ১০ পরিবার, সুলতানা মন্দির ত্রিপুরা পাড়ায় ৩০ পরিবার, বাঁশবাড়িয়া ত্রিপুরা পাড়ায় ১০ পরিবার, শীতলপুর ত্রিপুরা পাড়ায় ৩৮ পরিবার, দক্ষিণ সোনাইছড়ির ত্রিপুরা পাড়ায় ৭৫টি পরিবার বসবাস করে।

Post a Comment

0 Comments