আজও দেখা মেলে বিলুপ্ত প্রায় সনাতনী লোকাচার 'চৈত ঘাঁটা'

 

ছবিগুলো রাঙামাটি শহরের মাঝেরবস্তি এলাকা থেকে তোলা

 

অজয় মিত্র নিজস্ব প্রতিনিধি

সঠিক কোন নাম বা তথ্য কোথাও না থাকলেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সনাতনী পরিবারে একে 'চৈত ঘাঁটা' বলে।

 চৈত্র মাসের প্রথম দিন এক সময় প্রায় সনাতনী পরিবারে নিজ নিজ ঘরের দোয়ারে ভোর বেলা গোবর ও ফুল দিয়ে অর্ধ বৃত্তের মত করে সাজিয়ে দিতো। জনশ্রুতি আছে, বহু বছর আগে থেকে মূলত ফাল্গুন মাসের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় হাম, কয়েক রকমের বসন্ত, ডায়রিয়া, কলেরা সহ নানান রোগ বালায় মহামারি আকার ধারণ করতো। আজকের দিনের মত চিকিৎসা শাস্ত্র সে সময় অতটা উন্নত ছিল না বলেই অহরহ মৃত্যু সহ নানান ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল। সনাতনীদের বিভিন্ন আচারে পবিত্রতা প্রসঙ্গে গোবর একটি অনন্য উপাদান। 

                ছবিগুলো রাঙামাটি শহরের মাঝেরবস্তি এলাকা থেকে তোলা

তাই সে সময় যে যার ধর্ম বিশ্বাসে মহামারী থেকে পরিত্রাণ ও রোগ বালাই থেকে মুক্তির আশায় চৈত্র মাসের প্রথম দিন যার যার দোয়ারে এই 'চৈত ঘাঁটা' দিয়ে থাকতো। এই 'চৈত ঘাঁটা'র পুঁথিগত ও তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শ্রী কুশল বরণ চক্রবর্তী বলেন, 'এসবের কোন ধর্মীয় ও পুঁথিগত ব্যাখ্য্ বা বর্ণনা কোন বই পুস্তকে পাইনি। এসব মূলত লোকাচার। এক সময় দেশে দেশে বিভিন্ন মহামারীর ফলে কোথাও কোথাও লোকশূন্য হয়ে যেতো।

                ছবিগুলো রাঙামাটি শহরের মাঝেরবস্তি এলাকা থেকে তোলা

জরিবুটি, কবিরাজি, নানান আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার পাশাপাশি প্রত্যেকে যার যার ধর্ম বিশ্বাসে এই ধরনের কিছু কিছু লোকাচার পালন করতেন। এখনো যার কিছু কিছু প্রচলন রয়ে গেছে।' নাম বা উৎপত্তিগত যথাযথ কোন ব্যাখ্যা না থাকলেও, সময়ের আবর্তে মানুষ তার আচরণে, কাজে কর্মে, চলনে বলনে যতই আধুনিক হোক না কেন, যতই সর্বময় বিপ্লব সাধিত হোক না কেন, এখনো কিছু লোকাচার মানুষের মননে গেঁথে রয়েছে, যা সংখ্যায় গুটি কয়েক হলেও পালন করেন অনাদিকাল ধরে পরম্পরায়। 

'কেন করেন' এই প্রশ্নের উত্তর না থাকলেও, এসমস্ত লোকাচার ক্ষতির কিছু নয়, বরং আবহমান কালের কৃষ্টি সংস্কৃতির পরিচয় বহন করেন। [ছবিগুলো রাঙামাটি শহরের মাঝেরবস্তি এলাকা থেকে তোলা]

Post a Comment

0 Comments