গোয়াল ঘরে গরুর সাথে শে’কলে বাঁ’ধা মা


সারাদেশঃ গর্ভে ধারণ করে পরম যত্ন্রে লালন পালন করলেও বৃ’দ্ধ বয়সে সেই মায়েরই ঠিকানা হয়েছে গোয়াল ঘরে। এমনকি মানসিক রো’গী আখ্যা দিয়ে কো’মরে শি’কল দি’য়ে বেঁ’ধেও রে’খেছেন ছেলেরা। এ ঘটনা ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার গৌরিচন্না ই’উনিয়নের চরধুপতি এলাকায়।
খবর পেয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহর নি’র্দেশে বৃ’দ্ধা ওই মাকে উ’দ্ধার করে তার মেয়ের জি’ম্মায় দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেশিরা জানান, গত পাঁচ মাস ধরে মা খবিরুন্নেসাকে (৭৫) গোয়াল ঘরে বিছনা পেতে গরু বাঁ’ধার দড়ি দিয়ে বেঁ’ধে রাখা হয়। একদিন দ’ড়ি খু’লে তিনি মেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে ফের তাকে ছেলেরা ধ’রে আনেন। পরে একই স্থানে শি’কল দিয়ে বেঁ’ধে রা’খা হয়। শে’কল বাঁ’ধা অবস্থায় প্রায় পাঁচ মাস ধরে তিনি গোয়াল ঘরেই জীবনযাপন করছেন।

বয়সের ভারে কানে একটু কম শুনলেও খবিরুন্নেসা মানসিকভাবে স্বাভাবিক বলে জানান প্রতিবেশিরা। তারা বলেন, মূলত পৈত্রিক জমি-জমা ভাগ বাটোয়ারা হওয়ায় পরে ছেলেদের কেউ বৃ’দ্ধা মায়ের যত্ন নিতে রাজি নন। এ কারণে তাকে অবহেলায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। কোথাও যেন যেতে না পারেন সে কারণে কোম’রে লো’হার শে’কল দিয়ে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে। ওই গোয়াল ঘরেই দিনে একবার তাকে খাবার দেওয়া হয়।

প্রতিবেশী হুমায়ুন কবীর জানান, খবিরুন্নেসা দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী। দুই বছর আগে স্বামী আবদুল হামিদ খান মা’রা যাওয়ার পর সহায় সম্পত্তি ছেলে-মেয়েরা ভাগ করে নেন। মা খবিরুন্নেসার ভরণপোষণ নিয়ে ছেলেদের মধ্যে বি’রোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে এক বৈঠকে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় দুই ছেলে মিলে ভরণপোষণ করবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ছেলেদের কেউই ঠিকমতো মায়ের যত্ন নেননি। এছাড়াও রো’গে খবিরুন্নেসার শারীরিক অবস্থারও অ’বনতি হতে থাকে।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে বৃ’দ্ধা খবিরুন্নেসাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি গোয়াল ঘরে বিছানায় শে’কল বাঁ’ধা অবস্থায় দেখা যায়। সেখানে বসে তিনি নাতী-নাতনীদের ডাকছিলেন। শে’কলে বাঁ’ধা থাকায় তিনি বিছানা ছেড়ে নামতেও পারছিলেন না। এমনকি মশার উপদ্রব থেকে র’ক্ষা পেতে মশারিরও কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে।

এসময় গোয়ালঘরে লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে খবিরুন্নেসা পরিচয় জানতে চান। ছেলেদের ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনারা কারা বাবা? মোর পোলারা ভালো। হ্যারা মোরো ঠিকমত খাওন-দাওন দেয়। মোর পোলাগো যেন কেনো সমস্যা না অয় বাবা।”

নানাভাবে জানতে চাইলেও ছেলেদের নিয়ে কোনো অভিযোগ করেননি ওই বৃ’দ্ধা মা।

খবিরুন্নেসা বারবারই বলছিলেন, “আমার পোলারা আপনাগো দোয়ায় মোরে ঠিকমত খাওন দাওন দেয়। হ্যারা অনেক ভালো।”

খবিরুন্নেসার ছোট ছেলে বাচ্চুকে এসময় ঘরে পাওয়া যায়। বাচ্চু জানান, তিনি মায়ের ঠিকমতই ভরণপোষণ করছেন।

গোয়াল ঘরে কেন রাখলেন-জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, “মায়ের মাথায় স’মস্যা। আমি বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকি। মা কোথায় কখন চলে যায় তাই বেঁ’ধে রেখেছি।”

এ বিষয়ে বড় ছেলে বাদলের স্ত্রী বেবি বলেন, তার শাশুড়ি মানসিক রো’গী। সে কারণে তাকে ছেলেরা বেঁ’ধে রেখেছেন।

প্রতিবেশীরা জানান, খবর পেয়ে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্য’জিস্ট্রেট ও ই’উনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওই বাড়িতে গিয়ে বৃ’দ্ধাকে উ’দ্ধার করেন। এসময় তাকে পোশাক ও টাকা দিয়ে মেয়ে তাসলিমার জি’ম্মায় দেওয়া হয়।

গৌরিচন্না ই’উনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন বলেন, ই’উনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বৃ’দ্ধা খবিরুন্নেসাকে যথাসাধ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়াও তার ভরণপোষণ যাতে নিশ্চিত করা হয় সে বিষয়ে ছেলেদের ডেকে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এসময় চে’য়ারম্যান ওই বৃ’দ্ধাকে ২ হাজার টাকা দেন।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্য’জিস্ট্রেট জাকির হোসেন বলেন, “বিষয়টি চ’রম অ’মানবিক। এটি সামাজিক মূল্যবোধের অ’বক্ষয় ছাড়া কিছু না। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে উ’দ্ধার করে মেয়ে তাসলিমার জি’ম্মায় দিয়ে ছেলেদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করার নি’র্দেশ দিয়েছি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বরগুনার ডিসি) মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নজরে আসার সাথে সাথে সেখানে নির্বাহী ম্যা’জিস্ট্রেট পাঠিয়ে বৃ’দ্ধা মাকে উ’দ্ধার করা হয়েছে। সেই সাথে বৃ’দ্ধা মাকে নতুন বস্ত্র ও নগদ অর্থ প্রদান করে তার মেয়ের জি’ম্মায় রাখা হয়েছে।”

পুনরায় ছেলেরা যাতে তাদের মায়ের সঙ্গে এধরনের আচরণ না করতে পারে তার জন্য নি’র্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডিসি। তিনি আরো বলেন, “বিষয়টি অ’মানবিক। আমরা বরগুনা জেলা প্রশাসন বৃ’দ্ধা মায়ের পাশে আছি। সেই সাথে বৃ’দ্ধা মাকে যাতে তার ছেলেরা আর অ’বহেলা না করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”

স্বাধীন নিউজ২৪

Post a Comment

0 Comments